যুগে যুগে যারা সমাজ-শিক্ষা-ধর্ম সংস্কারক এর কাজ করেন, মানুষ মৃত্যুর পরেও যাদের অবদান মনে রাখে আর তাঁরা হয়ে থাকেন সমাজের কীর্তিমান পুরুষ । ঠিক তেমনই একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবকের নাম এনায়েতউদ্দিন মোঃকায়সার খান।
তিনি১৯৫৫ সালের ২ জানুয়ারি নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হোসেন নগর গ্রামে সম্ভ্রান্ত খান পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম মরহুম মোঃ আলাউদ্দিন খান(প্রাক্তন পরিচালক, পাট বোর্ড বাংলাদেশ সরকার)। উনি একজন শহীদ পরিবারের সন্তান। উনার বড় ভাই শহীদ নজিব উদ্দিন খান খুররম মুক্তিযুদ্ধের সময় আশুগঞ্জের সম্মুখে যুদ্ধে শহীদ হন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েতউদ্দিন মোঃ কায়সার খান ১৯৭০ সালে ভৈরব রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৭২ ঢাকা সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭৮ সালে ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচারাল সাইন্সেস বেঙ্গালুরু, ইন্ডিয়া থেকে ব্যাচলরস্ অফ ফিশারিজ সায়েন্স পাশ করেন। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে প্রথম শ্রেণী এম.এস.সি (ফিশারিজ) এবং ১৯৮৫ সালে স্টাডিজ ওন দ্যা ফিডিং মেকানিজম অফ তেলাপিয়া ফ্রাই টোকিও ইউনির্ভার্সিটি অফ ফিশারিজ, টোকিও, জাপান শিক্ষা জীবন শেষ করেন।
শুরুতে তিনি ১৯৮০সালের ২৮আগষ্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ এর প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালের ২৯ জুলাই পযন্ত শিক্ষকতা এই মহান পেশায় ছিলেন।১৯৮৩ সালের ২ জুন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর সহকারী অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পান।
বর্তমানে এনায়েতউদ্দিন মোঃ কায়সার খান সোনিয়া লিমিটেড, সোনিয়া অ্যান্ড সোয়েটারস লিমিটেড, সোনিয়া ফাইন নিট লিমিটেড, নাবা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, হোপস প্যাকেজিং লিমিটেড ও নেক্সাস ফ্রেট সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সামজিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদানঃ
২০০৭ সালে নিজ গ্রামে তার ভাইয়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান একাডেমী।২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান খুররম ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। যার সভাপতির হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি নিজেই। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ থেকে ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর পযন্ত তিনি নারায়ণপুর রাবেয়া ডিগ্রি কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি ছিলেন। ঢাকাস্থ বেলাব উপজেলা সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান উপদেষ্টা,
বেলাব উপজেলা সমিতি, ঢাকা।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান কলেজের অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এনায়েতউদ্দিন মোঃ কায়সার খান একজন বীর মু্ক্তিযোদ্ধা, মুসলিম জনহিতৈষী, ধার্মিক
উদার, জ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ। তিনি নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান কলেজ ও একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। কলেজে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মফস্বল অঞ্চলের শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এছাড়াও
ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি হাজার হাজার গরিব মেধাবী, অভাবগ্রস্থদের সাহায্য করে আসছেন। এই অঞ্চলে শিক্ষা ও সামাজিক দাতব্য কর্মকান্ডে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি সেই তালিকায় শীর্ষে থাকা একটি নাম এনায়েতউদ্দিন মোঃ কায়সার খান অন্যতম।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বেলাব সাংগঠনিক জেলা শাখার সভানেত্রী রাবেয়া খাতুন শান্তি বলেন, এনায়েতউদ্দিন মোঃ কায়সার খান একজন সাদামনের মানুষ। ওনি ব্যবসার পাশাপাশি অসহায় দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।প্রতি বছরই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গরিব বেকার নারীদের সেলাই মেশিন, শিক্ষাবৃত্তি , ঘর, স্যানিটারি ল্যাট্রিন, টিউবওয়েল, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে থাকেন।
এনায়েতউদ্দিন মোঃ কায়সার খান বলেন, আমার ছাত্রজীবনে, প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আগ্রহগুলি মূলত খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৭৭- ৭৮ সালে আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট কৃষি বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাঙ্গালোরের প্রতিনিধিত্ব করেছি। পরগন তিন বছর কলেজ অফ ফিশারিজ অ্যাথলেটিক দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। ১৯৭৬-১৯৭৭ সময় দলের অধিনায়ক ছিলাম ১৯৭৭-১৯৭৮ সালে কলেজের দাবা রানার আপ ছিলাম। ১৯৭৯ সালে সহ অধিনায়ক এবং ১৯৮১ সালে অধিনায়ক হিসেবে জাতীয় টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ প্রতিনিধিত্ব করেছি। এখন আমি বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। বর্তমানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান খুররম ফাউন্ডেশনের সভাপতি হিসাবে আছি যা মূলত নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্নশ্রেণির মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং তাদের নিজস্ব একটি কর্ম শুরু করার জন্য এককালীন ও অফেরতযোগ্য মূলধন দিয়ে সাহায্য করা, গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান ও অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান করা, যেন তারা নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। বেলাব উপজেলার বন্যা ও ঘূণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও শীতে সময় শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়। তাছাড়া এলাকার মেধাবি শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও প্রদান করা হয় এই ফান্ড থেকে। আমি বর্তমানে HOPES (Helping Organization for Promising and Energetic Student) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এটি একটি বেসরকারি, অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। HOPES এমন একটি সংগঠন যা বাংলাদেশে প্রত্যেক বছর ১১০ জন গরীব শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করে থাকে।
উল্লেখ্য যে তার ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু নঈম মোঃ নজিব উদ্দীন খাঁন (খুররম) ২০২৪ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ পুরস্কার লাভ করেন।
https://slotbet.online/